• শুক্রবার, ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৫:৪১ অপরাহ্ন |
  • English Version

চার সন্তান নিয়ে অসহায় ময়নার পাশে দাঁড়ালো নকলা অদম্য মেধাবী সংস্থা 

নকলা প্রতিনিধি: স্বামী ফালাইন্না তাকে ফেলে গিয়েছে কয়েক বছর আগে। তিন মেয়ে আর ছোট এক ছেলেকে নিয়ে ঠায় নিয়েছেন পিতা হাতেম আলীর বাড়ীতে।

দারিদ্রতার সাথে যুদ্ধ করতে করতে বয়সের চাপে পড়ে বাবা হাতেম আলীর বর্তমানে শোচনীয় অবস্থা । চার নাতি-নাতনিকে নিয়ে মেয়ে তার সংসারে আশ্রয় নেওয়ায় তার অবস্থা এখন মাথায় পাহাড় তুলে দেওয়ার মতো হয়ে গিয়েছে। বৃদ্ধ হাতেম আলী না পারছেন ৭ সদস্যের এই সংসারের বোঝা বহন করতে, না পারছেন মেয়ে আর নাতি-নাতনিকে ফেলে দিতে। দিনশেষে স্ত্রী,মেয়ে,নাতি-নাতনির মুখে তিনবেলা দুমুঠো ভাত তুলে দেওয়াটাই অসম্ভব হয়ে গিয়েছে হাতেম আলীর পক্ষে।

সবকিছু বুঝেও না বোঝার ভান করে প্রকৃতির নিষ্ঠুরতায় অসহায় হয়ে শেষ আশ্রয় হিসেবে মেয়ে তবুও পড়ে রয়েছেন বাবার কাছেই। শত কষ্ট হলেও স্বামীর মতো বাবাতো আর অস্বীকার করে ফেলে দিচ্ছে না।

বলছি শেরপুরের নকলা উপজেলার বানেশ্বর্দী ইউনিয়নের বানেশ্বর্দী পূর্বপাড়া এলাকার হাতেম আলীর মেয়ে ময়না বেগমের কথা। বাবা মায়ের ভালবাসার আকাশে উড়াতে আদরের মেয়ের নাম রেখেছিলো “ময়না”। স্বাভাবিক নিয়মেই বড় হওয়ার পর বাবা-মা ময়নাকে বিয়ে দিয়েছিলেন একই উপজেলার জালালপুর এলাকার ফালাইন্না নামক জৈনক ব্যক্তির সাথে।

স্বাধীন ময়নার সুখের আকাশে বিয়ে নামক পরাধীনতার এই শিকল কেবলই নিয়ে এসেছিলো দুঃখ আর অসহায়ত্ব। স্বামী ফালাইন্না তাকে নামে মাত্র বিয়ে করেছিলেন ঠিকই তবে শতভাগ দায়িত্ব নেননি কখনোই । বিয়ের কিছুদিন পর থেকেই বউকে ফেলেরেখে ফালাইন্না নিরুদ্দেশ হয়ে যেতেন অজানায়। কয়েক মাস পর আবার দেখা মিলতো তার । এভাবেই চলছিলো ময়নার সংসার। তারপর একে একে তিন কন্যা আর এক পুত্রের জন্ম হয় ময়না-ফালাইন্নার এই পুতুল খেলার সংসারে।

সবশেষ পুত্র সন্তান জন্ম নেওয়ার পর থেকে অসুস্থ হয়ে পড়েন ময়না। স্বামী অসুস্থ ময়নাকে বাবার বাড়িতে রেখেই যা নিরুদ্দেশ হন আর ফিরে আসননি । বিভিন্ন জায়গায় চিকিৎসা করার পরও অবস্থার উন্নতি হয়নি ময়নার। উঠে দাঁড়াতে গেলেও ময়নার প্রয়োজন হয় অন্য কারো সাহায্যের।

বর্তমানে চার সন্তান নিয়ে অসহায়ত্বের চাপে অনেকটা কোনঠাসা জীবন যাপন করছেন মধ্যবয়সী এই ময়না। বৃদ্ধ বাবার কষ্ট হচ্ছে জেনেও নিরুপায় হয়ে তবুও পড়ে রয়েছেন বাবার সংসারেই। বৃদ্ধ বাবা হাতেম আলীও সারাদিন ছুটে চলেছেন পাহাড় সমান বোঝার এই সংসারের ভার সামাল দিতেই। দিন শেষে খেয়ে কিংবা না খেয়েই দিন কাটে ৭ সদস্যের এই পরিবারের সদস্যদের।

স্বামীর অবহেলায় চার সন্তান নিয়ে অসহায় জীবন যাপন করা ময়নার অসহায়ত্বের সন্ধান পাওয়ার পর তার পাশে দাঁড়িয়েছে নকলা অদম্য মেধাবী সংস্থা নামক একটি সেচ্ছাসেবী ও সহায়তামূলক সংগঠন। ময়না বা তার বৃদ্ধ বাবা যাতে একটি চা পানের দোকান দিয়ে তাদের জীবিকা নির্বাহ করতে পারে সেজন্য নকলা অদম্য মেধাবী সংস্থার পক্ষ থেকে তাদের হাতে নগদ ১০ হাজার টাকা তুলে দিয়েছে সংস্থাটির সদস্যরা।

শুক্রবার (৫ নভেম্বর) সকালে ময়নার বৃদ্ধ বাবার বাড়িতে গিয়ে অসুস্থ ময়নার হাতে এ আর্থিক সহায়তা তুলে দেন নকলা অদম্য মেধাবী সংস্থার সভাপতি শফিকুল ইসলাম শফিক এবং সাধারন সম্পাদক মো.নাসির উদ্দিন।

উক্ত আর্থিক সহায়তা বিতরনকালে নকলা প্রেসক্লাবের সহ সভাপতি (প্রতিনিধি এশিয়ান টেলিভিশন) খন্দকার জসিমউদদীন মিন্টু, নকলা অদম্য মেধাবী সংস্থার ত্রান ও অনুদান বিষয়ক সম্পাদক জাহাঙ্গীর রউফ শিবলু,সংস্থাটির নির্বাহী সদস্য মোশাররফ হোসেন শ্যামল এবং সুজন মিয়া সহ স্থানীয় গন্যমান্য ব্যক্তিবর্গ উপস্থিত ছিলেন।


আপনার মতামত লিখুন :

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।